মোবাইলে গেম খেলা কি হারাম - কোন কোন খেলা হারাম

আমরা যারা ইসলাম ধর্মের রয়েছি তাদের অনেকেরই মনে প্রশ্ন থাকে মোবাইলে গেম খেলা কি হারাম। কারন আমরা মুসলমানরা অনেকেই গেম খেলে সময় অপচয় করে থাকি। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ জানে না মোবাইলে গেম খেলা কি হারাম এবং কোন কোন খেলা হারাম। তাই আজকের এই পোস্টে আমরা আপনাদের জানাবো মোবাইলে গেম খেলা কি হারাম।

মোবাইলে গেম খেলা কি হারাম

বর্তমান যুগে মোবাইল গেম খেলা একটি জনপ্রিয় বিনোদনের মাধ্যম হয়ে উঠেছে। এটি বাচ্চা থেকে শুরু করে বড়দের মধ্যেও বেশ জনপ্রিয়। তবে ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে মোবাইল গেম খেলা হালাল না হারাম, তা অনেকের মধ্যেই প্রশ্নবোধক হয়ে আছে। ইসলামের বিধান ও হাদিসের আলোকে বিষয়টি বিশ্লেষণ করলে এর সঠিক উত্তর পাওয়া সম্ভব। নিচে কিছু উদাহারণ দেওয়া হলো।

ইসলামের দৃষ্টিতে সময়ের ব্যবহার
ইসলামে সময়ের গুরুত্ব অত্যন্ত বেশি। কুরআনে আল্লাহ বলেন:

“শপথ সময়ের, মানুষ অবশ্যই ক্ষতির মধ্যে আছে, তবে তারা নয় যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকর্ম করেছে।”
(সূরা আল-আস্‌র, আয়াত ১-৩)

ইসলামের দৃষ্টিতে যে কোনো কাজ সময়ের অপচয়ের কারণ হলে তা নিন্দনীয়। মোবাইল গেম যদি সময়ের অপচয় করে এবং নামাজ, ইবাদত বা দৈনন্দিন দায়িত্ব পালনে ব্যাঘাত ঘটায়, তাহলে এটি হারাম হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।


গেম খেলার কারণে নামাজ ও ইবাদতের ক্ষতি
নবী করিম (সা.) বলেছেন:

“যে ব্যক্তি কোনো কাজের কারণে নামাজ বিলম্ব করে, সে যেন তার কাজের জন্য আল্লাহর শাস্তির ভয় করে।”
(তিরমিজি)

গেম খেলার নেশা যদি নামাজ বা ধর্মীয় কাজের সময় নষ্ট করে, তবে তা স্পষ্টতই হারাম।


অশ্লীলতা ও অনৈতিক বিষয়
ইসলাম সকল ধরনের অশ্লীলতা এবং অনৈতিক আচরণ নিষিদ্ধ করেছে। কুরআনে বলা হয়েছে:

“তোমরা অশ্লীল কাজ এবং যা গোপন ও প্রকাশ্য, উভয়ই বর্জন কর।”
(সূরা আল-আন’আম, আয়াত ১৫১)

মোবাইল গেমের অনেক ক্ষেত্রে অশ্লীল কন্টেন্ট, সহিংসতা এবং ইসলাম বিরোধী বিষয় থাকে। এমন গেম খেলা স্পষ্টতই হারাম।


জুয়া এবং বাজি
মোবাইল গেমের মাধ্যমে যদি অর্থ বা সম্পদ বাজি ধরা হয় বা জুয়ার মতো কার্যকলাপ হয়, তবে তা সরাসরি হারাম। আল্লাহ বলেন:

“হে ঈমানদারগণ! মদ, জুয়া, মূর্তিপূজার বেদি এবং ভাগ্য নির্ধারণের তীর এসব শয়তানের অপবিত্র কাজ, সুতরাং এগুলো থেকে বিরত থাকো যাতে তোমরা সফল হতে পারো।”
(সূরা মায়েদা, আয়াত ৯০)


আসক্তি এবং সময়ের অপচয়
রাসুল (সা.) বলেছেন:

“কিয়ামতের দিন কোনো ব্যক্তির পা নড়বে না যতক্ষণ না তাকে তার সময় কোথায় ব্যয় করেছে তা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে।”
(তিরমিজি)

মোবাইল গেমের নেশা যদি কারো জীবনে এত প্রভাব ফেলে যে তা দায়িত্বশীলতা নষ্ট করে, তবে তা হারাম।

কোন কোন খেলা হারাম

ইসলামে খেলাধুলা সাধারণত হারাম নয়, বরং শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নের জন্য খেলাধুলাকে উৎসাহিত করা হয়েছে। তবে কিছু খেলা এবং কার্যকলাপ হারাম হিসেবে বিবেচিত হয় যদি তা ইসলামের নীতিমালা লঙ্ঘন করে। হাদিসের আলোকে এমন কিছু খেলার বিবরণ নিচে দেওয়া হলো যা হারাম হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে বা নিষেধাজ্ঞার শামিল:


১. জুয়া বা বাজির সঙ্গে যুক্ত খেলা

কুরআনে স্পষ্টভাবে জুয়া হারাম করা হয়েছে:

“তারা আপনাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। বলুন, এতে রয়েছে মহাপাপ এবং মানুষের জন্য কিছু উপকারও আছে, তবে এর পাপ উপকারের চেয়ে অনেক বড়।”
(সূরা আল-বাকারা, আয়াত ২১৯)

হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:

“যে ব্যক্তি বাজি ধরে কিছু খেলে, সে যেন তার হাত দিয়ে শূকরের রক্ত ধরে।”
(মুসলিম)

যে খেলায় জুয়ার মতো বাজি ধরা হয়, যেমন ঘোড়দৌড়, ক্যাসিনো গেম ইত্যাদি, সেগুলো হারাম।


২. নিষিদ্ধ উদ্দেশ্যে খেলা

যদি কোনো খেলা অশ্লীলতা, সহিংসতা বা অনৈতিক কার্যকলাপে উদ্বুদ্ধ করে, তাহলে তা হারাম।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
“যে ব্যক্তি অশ্লীলতা বা পাপের দিকে আহ্বান জানায়, সে জাহান্নামের পথে রয়েছে।”
(তিরমিজি)

যদি কোনো খেলা মানুষকে ইসলামবিরোধী কাজের দিকে নিয়ে যায়, যেমন মিথ্যা বলা, প্রতারণা করা বা শরীয়তের বিধান লঙ্ঘন করা, তাহলে তা নিষিদ্ধ।


৩. মূর্তি বা জীবন্ত প্রাণীর ছবি ব্যবহার করে খেলা

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:

“নিশ্চয়ই কিয়ামতের দিন সবচেয়ে কঠিন শাস্তি দেওয়া হবে তাদের, যারা জীবন্ত প্রাণীর ছবি তৈরি করে।”
(বুখারি, মুসলিম)

যেসব খেলায় জীবন্ত প্রাণীর ছবি বা মূর্তি ব্যবহার করা হয় এবং তা শ্রদ্ধা বা পূজার সঙ্গে সম্পর্কিত, সেগুলো হারাম।


৪. নামাজ ও ইবাদতে বাধা সৃষ্টি করা খেলা

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
“যে ব্যক্তি এমন কাজ করে যা তাকে নামাজ থেকে বিরত রাখে, তার কাজ অগ্রহণযোগ্য।”
(তিরমিজি)

যদি কোনো খেলা নামাজ, কুরআন অধ্যয়ন বা অন্যান্য ইবাদতের সময় নষ্ট করে, তাহলে তা হারাম।


৫. যেখানে অশ্লীল পোশাক বা আচরণ জড়িত

যদি খেলায় অশ্লীল পোশাক পরিধান করা বা ইসলামবিরোধী আচরণ প্রদর্শন করা হয়, তাহলে তা হারাম।

আল্লাহ বলেন:
“তোমরা অশ্লীল কাজ, যা গোপন বা প্রকাশ্য, তার নিকটবর্তী হয়ো না।”
(সূরা আল-আন’আম, আয়াত ১৫১)


৬. যে খেলায় প্রাণীর ওপর নিষ্ঠুরতা করা হয়

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:

“প্রাণীর ওপর অত্যাচারকারীকে আল্লাহ অভিশাপ দিয়েছেন।”
(মুসলিম)

যেসব খেলায় প্রাণীদের ওপর নিষ্ঠুরতা বা কষ্ট দেওয়া হয়, যেমন মোরগ লড়াই বা ষাঁড় লড়াই, সেগুলো হারাম।


৭. বেহুদা বা অর্থহীন খেলাধুলা

ইসলামে অর্থহীন ও অপ্রয়োজনীয় কাজকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
“একজন ভালো মুসলিমের গুণ হলো, সে অর্থহীন কাজ বর্জন করে।”
(তিরমিজি)

যে খেলায় শারীরিক, মানসিক বা ধর্মীয় কোনো উপকার নেই এবং শুধু সময় নষ্ট হয়, তা হারাম হতে পারে।

সব খেলা হারাম নয়; বরং খেলাধুলা শরীর ও মনের প্রশান্তি এবং সামাজিক সম্পর্ক উন্নত করতে সাহায্য করে। তবে যে খেলাগুলো জুয়া, অশ্লীলতা, সহিংসতা বা ইসলামের বিধান লঙ্ঘন করে, সেগুলো স্পষ্টতই হারাম। একজন মুসলিমের উচিত খেলাধুলা নির্বাচনের ক্ষেত্রে ইসলামের নীতিমালা অনুসরণ করা এবং তা হালাল সীমার মধ্যে রাখা।

By tech-dustbin

এই ওয়েবসাইট মূলত আমার ইন্টারনেট জ্ঞান পরিচর্চা এবং তা সবার মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য তৈরি করা হয়েছে । আমি চেষ্টা করি প্রতিদিন টেকনোলজি নিয়ে নতুন কিছু শিখতে এবং তা এই ওয়েবসাইট এর মাধ্যমে সবার সাথে শেয়ার করতে । নতুন নতুন তথ্য জানতে যারা পছন্দ করেন তারা টেক ডাস্টবিন সাইট ফলো করতে পারেন।