বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত ব্যবসার হার বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং ব্যবসার প্রতি মানুষের আগ্রহ অনেক বাড়ছে বিশেষ করে স্টক ব্যবসার। আপনি কি স্টক ব্যবসা করার জন্য আগ্রহী তাহলে আজকের এই পোস্টটি আপনার জন্য। আমরা এই পোস্টে সেরা ১০ টি লাভজনক স্টক ব্যবসার আইডিয়া জানাবো।
লাভজনক স্টক ব্যবসার আইডিয়া
বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে স্টক ব্যবসা অনেক জনপ্রিয়। অনেক মানুষই আছে যারা স্টক ব্যবসা করে দিন দিন সফল হচ্ছে। এজন্য আমাদের মাঝে আমার অনেক যুবক আছে যারা স্টক ব্যবসা শুরু করতে চায়। কিন্তু কি ব্যবসা করবে সে সম্পর্কে ধারণা নেই। অনেকেই এই ধারণা নেওয়ার জন্য অনলাইনে অনুসন্ধান করে স্টক ব্যবসার আইডিয়া।
১। মসলার স্টক ব্যবসা
বর্তমানে মসলা ছাড়া কোন খাবারই তৈরি হয় না। যেমন গরুর মাংস, মুরগির মাংস, বিরিয়ানি এরকম প্রায় সব রকম খাবারেই মসলার প্রয়োজন।
অতএব বুঝা যাচ্ছে মসলার অনেক চাহিদা রয়েছে। এর চাহিদা কখনো কমবে না। আপনি মসলার স্টক ব্যবসা করে লাখপতি হয়ে যেতে পারেন। তবে এজন্য অবশ্যই আপনাকে কিছু নিয়মকানুন মেনে ব্যবসা করতে হবে। তাহলেই আপনি অনেক লাভবান হতে পারবেন।
২। ধানের স্টক ব্যবসা
ধান বাংলাদেশের প্রধান খাদ্যশস্য। দেশের বেশিরভাগ মানুষ ভাতকে প্রধান খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। ফলে ধানের চাহিদা সারা বছরই থাকে। কৃষকরা মৌসুম শেষে ধান কাটার পর তা বাজারে বিক্রি করে দেন।
ধানের স্টক ব্যবসা বলতে বোঝানো হয়, মৌসুমে কৃষকের কাছ থেকে কম দামে ধান ক্রয় করে তা মজুদ করে রাখা এবং পরবর্তীতে চাহিদা বাড়লে বা ধানের মূল্য বৃদ্ধি পেলে তা বিক্রি করে লাভ করা।
তবে এই ব্যবসায় ঝুঁকিও কম নয়। সঠিক পরিকল্পনা, বাজার বিশ্লেষণ ও ধানের সংরক্ষণ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারলে ধানের স্টক ব্যবসা থেকে ভালো মুনাফা অর্জন করা সম্ভব।
৩। সরিষার স্টক ব্যবসা
সরিষা বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ তেলবীজ ফসল। এটি শুধু তেল উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত হয় না, বরং গবাদি পশুর খাদ্য এবং সার উৎপাদনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বর্তমান সময়ে কৃষিপণ্যভিত্তিক ব্যবসার প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়ছে, বিশেষ করে স্টক ব্যবসায়। সরিষার স্টক ব্যবসা হতে পারে একটি লাভজনক উদ্যোগ।
প্রতি বছর সরিষা মৌসুমে (ডিসেম্বর-ফেব্রুয়ারি) প্রচুর পরিমাণ সরিষা উৎপাদিত হয়। এই সময় দাম তুলনামূলকভাবে কম থাকে। এই সময়ে সরিষা কৃষকদের কাছ থেকে কিনে মজুদ করা যায়। পরে চাহিদা বাড়ার সময় (বছরের মধ্যভাগে) অধিক মূল্যে বিক্রি করা সম্ভব।
সরিষার স্টক ব্যবসা একটি লাভজনক উদ্যোগ হতে পারে, যদি পরিকল্পিতভাবে কাজ করা যায়। সঠিক সময়ে ক্রয়-বিক্রয়, গুদামজাতকরণ এবং বাজার বিশ্লেষণ এই ব্যবসার সফলতার মূল চাবিকাঠি। তাই আগ্রহী উদ্যোক্তাদের সরিষার স্টক ব্যবসা শুরু করতে যথাযথ গবেষণা এবং পরিকল্পনা গ্রহণ করা উচিত।
৪। পাটের স্টক ব্যবসা
পাটজাত পন্যের চাহিদা অনেক বেশি। একটি প্রতিবেদনে দেখা গিয়েছে ২০১১-১২ অর্থবছরে পাটজাত পন্যের রপ্তানি ছিল ৯৭ কোটি মার্কিন ডলার।
আরেকটি প্রতিবেদনে দেখা যায় আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে পাট পণ্যের রপ্তানি করে ৫০০ কোটি ডলার আয় করা সম্ভব। তাহলে আপনারা বুঝতেই পারছেন পাটের ব্যবসা কি রকম।
যদি সময়মতো পাট স্টক করে রেখে এবং যখন দাম বেড়ে যায় তখন বিক্রি করে দেন। তাহলে এই পাটের স্টক ব্যবসায় অনেক লাভবান হতে পারবেন।
৫। আলুর স্টক ব্যবসা
বাংলাদেশের প্রতিবছর আলুর উৎপাদন একবারই হয়। আর এই আলুর চাহিদা এর কারণে অনেক বেশি থাকে। প্রায় সব কিছু রান্না করার ক্ষেত্রে আলুর প্রয়োজন অপরিসীম। আরেক সিজন আলু উৎপাদন হওয়ার কারণে বাংলাদেশের চাহিদা ব্যাপক পরিমাণে।
যদি আপনারা আলু স্টক করে রেখে দিতে পারেন এবং সময় মত বিক্রি করে দেন তাহলে আলুর স্টক ব্যবসায় আপনি অনেক লাভবান হতে পারবেন।
তবে অবশ্যই নিয়ম মত স্টক ব্যবসা করতে হবে না হয় আপনি ক্ষতির সম্মুখীন হবেন।
৬। পেঁয়াজের স্টক ব্যবসা
পেঁয়াজ দৈনন্দিন জীবনে অতি প্রয়োজনীয় একটি খাদ্য উৎপাদন। সুতরাং পেঁয়াজের চাহিদা সব সময় থাকে। আপনারা চাইলে পেঁয়াজের স্টক ব্যবসা করতে পারবেন।
তবে আপনার আগে জানতে হবে কখন বাজারে পেঁয়াজের চাহিদা বেশি এবং কম থাকে। যদি সঠিক সময় জেনে আপনারা বিক্রি করতে পারেন তাহলে পেঁয়াজের এই স্টক ব্যবসায় অনেক লাভবান হতে পারবেন।
৭। ইটের স্টক ব্যবসা
বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে নির্মাণ শিল্পের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। গ্রাম থেকে শহর, সর্বত্রই গড়ে উঠছে নানান স্থাপনা, বাড়িঘর, রাস্তা-ঘাট। এসব নির্মাণকাজে ইট একটি অপরিহার্য উপকরণ। তাই ইটের চাহিদা সারা বছরই থাকে। এই চাহিদাকে কাজে লাগিয়ে ইটের স্টক ব্যবসা একটি লাভজনক উদ্যোগ হতে পারে।
ইটের স্টক ব্যবসা বলতে বোঝানো হয়, বড় পরিমাণে ইট কিনে মজুদ করে রাখা এবং চাহিদা অনুযায়ী খুচরা বা পাইকারি বিক্রি করা। এটি এমন একটি ব্যবসা, যেখানে মূলত পণ্যটি একবার কিনে এনে গুদামজাত করতে হয়, তারপর সময় ও চাহিদা অনুযায়ী বিক্রি করা হয়।
ইটের ব্যবসায় লাভের হার তুলনামূলক ভালো। সাধারণত প্রতি হাজার ইটে ৩০০-৫০০ টাকা পর্যন্ত লাভ হতে পারে। চাহিদার সময় (বর্ষা ছাড়া) লাভ আরও বেড়ে যায়। বড় পরিসরে ব্যবসা করলে মাসে কয়েক লক্ষ টাকা আয় সম্ভব।
ইটের স্টক ব্যবসা সঠিক পরিকল্পনা ও উদ্যোগ নিয়ে শুরু করলে সফলতা পাওয়া সম্ভব।
৮। ডালের স্টক ব্যবসা
বাংলাদেশে প্রতিদিন মানুষের খাদ্য তালিকায় ডাল একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। গ্রাম হোক বা শহর, সব জায়গাতেই ডালের চাহিদা রয়েছে।
ডালের স্টক ব্যবসা বলতে বোঝায়, বড় পরিমাণে বিভিন্ন ধরনের ডাল কিনে মজুদ করে রাখা এবং চাহিদা অনুযায়ী খুচরা বা পাইকারি বিক্রি করা। এটি এমন একটি ব্যবসা যেখানে মূলত একবার পণ্য কিনে এনে গুদামজাত করতে হয়, পরে সময় ও চাহিদা অনুযায়ী বিক্রি করা হয়।
ডালের ব্যবসায় লাভের হার তুলনামূলক ভালো। সাধারণত প্রতি বস্তা ডালে ২০০-৫০০ টাকা পর্যন্ত লাভ হতে পারে। চাহিদা বেশি সময়ে লাভ আরও বেড়ে যায়। বড় পরিসরে ব্যবসা করলে মাসে লক্ষাধিক টাকা আয় সম্ভব।
৯। খেজুরের স্টক ব্যবসা
বাংলাদেশে খেজুর একটি জনপ্রিয় এবং পুষ্টিকর ফল। বিশেষ করে রমজান মাসে খেজুরের চাহিদা অনেক বেড়ে যায়। সারাবছরই কমবেশি খেজুরের বাজার রয়েছে, তবে নির্দিষ্ট সময়ে এর চাহিদা ও দাম বহুগুণ বেড়ে যায়। এই চাহিদাকে কাজে লাগিয়ে খেজুরের স্টক ব্যবসা একটি লাভজনক উদ্যোগ হতে পারে।
রমজান মাসে খেজুরের ব্যবসায় লাভের হার তুলনামূলক ভালো। মৌসুম ছাড়া সাধারণ সময়ে ৫০০-১০০০ টাকা লাভ হতে পারে প্রতি বস্তায়, আর রমজান মাসে তা দ্বিগুণ বা ততোধিক হতে পারে। বড় পরিসরে ব্যবসা করলে মাসে লক্ষাধিক টাকা আয় করা সম্ভব।
১০। চালের স্টক ব্যবসা
বাংলাদেশে চাল মানুষের প্রধান খাদ্য। প্রতিদিন দেশের প্রতিটি ঘরে চালের চাহিদা থাকে। ধান কাটার মৌসুমে চালের দাম কম থাকে, কিন্তু পরে দাম বেড়ে যায়। এই মূল্য ওঠানামার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে চালের স্টক ব্যবসা একটি লাভজনক উদ্যোগ হতে পারে।
চালের ব্যবসায় লাভের হার ভালো। মৌসুমে চাল কম দামে কিনে সংরক্ষণ করে পরে বেশি দামে বিক্রি করলে প্রতি বস্তায় ২০০-৫০০ টাকা পর্যন্ত লাভ হতে পারে। বড় পরিসরে ব্যবসা করলে মাসে লক্ষাধিক টাকা আয় করা সম্ভব।
শেষ কথা
আশা করি আজকের এই পোস্ট থেকে আপনারা সবাই জানতে পেরেছেন স্টক ব্যবসার আইডিয়া সম্পর্কে। উপরের এই স্টক ব্যবসা গুলোর মধ্যে আপনারা যেকোনো ব্যবসা করতে পারেন। সঠিকভাবে পরিচালনা করলে অল্প সময়ে লাভবান হতে পারবেন।