জুলুম নিয়ে হাদিসের সেরা উক্তি ও কিছু কথা

ইসলাম ধর্মে ন্যায়বিচার এবং সমতার উপর ভিত্তি করে সমাজ গঠনের ওপর অত্যন্ত গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে, জুলুম বা অত্যাচারকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ এবং নিন্দনীয় হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। জুলুমের বিরুদ্ধে ইসলামে রয়েছে স্পষ্ট এবং শক্তিশালী নির্দেশনা। হাদিসে এ বিষয়ে নবী মুহাম্মদ (সা) এর বাণীসমূহ আমাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা। তাই আজকের এই পোস্টে জুলুম নিয়ে হাদিসের সেরা উক্তি ও কিছু কথা ধরব।

জুলুম নিয়ে উক্তি হাদিসের

ইসলামের শিক্ষা অনুযায়ী জুলুম বা অন্যায় অত্যন্ত গুরুতর অপরাধ হিসেবে বিবেচিত। হাদিসে বিভিন্নভাবে জুলুম বা অন্যায়ের বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে এবং এর ভয়াবহ পরিণতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। নিচে কিছু হাদিস দেওয়া হলো যা জুলুমের বিষয়ে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন। তাহলে চলুন দেখে নেই জুলুম নিয়ে হাদিসের কিছু উক্তি।

  • আবু হুরায়রা (রাযি.) হতে বর্ণিত:
    রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:
    “আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে আমার বান্দাগণ! আমি নিজের উপর যুলুমকে হারাম করেছি এবং তোমাদের মধ্যেও তা হারাম করেছি, সুতরাং তোমরা একে অপরের উপর যুলুম করো না।  (সহীহ মুসলিম: ২৫৭৭)
  • আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাযি.) হতে বর্ণিত:
    রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:
    “যুলুম কিয়ামতের দিন অন্ধকার হয়ে আসবে।  (সহীহ বুখারী: ২৪৪৭)
  • আবু মূসা আশ’আরী (রাযি.) হতে বর্ণিত:
    রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:
    “নিশ্চয়ই আল্লাহ যুলুমকে বিলম্বিত করেন, তবে যখন পাকড়াও করেন, তখন তাকে ছাড়েন না।  (সহীহ বুখারী: ৪৬৮৬)
  • জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাযি.) হতে বর্ণিত:
    রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:
    “যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে কারো জমি আত্মসাৎ করবে, কিয়ামতের দিন সাত তবক জমি তার গলায় বোঝা হয়ে থাকবে।  (সহীহ মুসলিম: ১৬১০)
  • আবু হুরায়রা (রাযি.) হতে বর্ণিত:
    রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:
    “তোমরা যুলুম থেকে বেঁচে থাকো, কেননা যুলুম কিয়ামতের দিন অন্ধকার হবে।  (সহীহ মুসলিম: ২৫৭৮)
  • আবু হুরায়রা (রাযি.) হতে বর্ণিত:
    রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:
    “যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে কোনো মুমিনের অধিকার ক্ষুণ্ন করবে, আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করতে দেবেন না।  (সুনান ইবনে মাজাহ: ২৪৩০)
  • আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাযি.) হতে বর্ণিত:
    রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:
    “দুঃখী মানুষের দোয়া থেকে বেঁচে থাকো, কেননা তার দোয়া আল্লাহর সাথে কোনো পর্দা ছাড়াই পৌঁছে যায়।  (সহীহ বুখারী: ২৪৪৮)
  • আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাযি.) হতে বর্ণিত:
    রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:
    “যে ব্যক্তি যুলুম করবে, সে কিয়ামতের দিন নিজের অপরাধের দায় বহন করবে।  (সহীহ মুসলিম: ২৫৮২)
  • আবু মূসা আশ’আরী (রাযি.) হতে বর্ণিত:
    রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:
    “যুলুম মানুষের ধ্বংসের কারণ, আর যারা যুলুম করবে, তারা দুনিয়ায় ও আখিরাতে ধ্বংস হবে।  (সহীহ মুসলিম: ২৫৮৩)
  • আবু হুরায়রা (রাযি.) হতে বর্ণিত:
    রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:
    “যুলুম করার জন্য কোনো অজুহাত গ্রহণযোগ্য হবে না।  (সহীহ বুখারী: ৬৫৫৭)
  • আনাস ইবনে মালিক (রাযি.) হতে বর্ণিত:
    রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:
    “যুলুম মানুষের অন্তরে পাপের অন্ধকার সৃষ্টি করে।  (সুনান আত-তিরমিজি: ২৫০৮)
  • আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাযি.) হতে বর্ণিত:
    রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:
    “যুলুম কিয়ামতের দিন মানুষের জন্য চরম পরিণতি ডেকে আনবে।  (সহীহ মুসলিম: ২৫৮৪)
  • আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাযি.) হতে বর্ণিত:
    রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:
    “দুঃখী মানুষের দোয়া আল্লাহর কাছে পৌঁছাতে কোনো পর্দা থাকে না, তাই যুলুম থেকে বেঁচে থাকো।  (সহীহ বুখারী: ২৪৪৮)

জুলুম নিয়ে হাদিসের কিছু কথা

জুলুম বা অবিচার নিয়ে ইসলামে বেশ কিছু হাদিস রয়েছে, যেখানে জুলুমের বিরুদ্ধে সতর্ক করা হয়েছে এবং এর ফলাফলের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। নিচে কয়েকটি হাদিস তুলে ধরা হলো:

  • আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত:
    রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: “তোমরা জুলুম থেকে বিরত থাকো, কারণ জুলুম কিয়ামতের দিন অন্ধকারের কারণ হবে।  — সহিহ মুসলিম
  • ইবনু উমার (রা.) থেকে বর্ণিত:
    রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: “মুসলমান হলো সে ব্যক্তি যার হাত ও জিহ্বা থেকে অন্য মুসলমান নিরাপদ থাকে, এবং মুহাজির হলো সে ব্যক্তি যে আল্লাহ যা নিষিদ্ধ করেছেন তা থেকে নিজেকে দূরে রাখে।  — সহিহ বুখারি
  • আবু মুসা আশ’আরী (রা.) থেকে বর্ণিত:
    রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: “আল্লাহ জালিমকে (অবিচারকারী) একসময় পর্যন্ত অবকাশ দেন, তারপর যখন তিনি তাকে পাকড়াও করেন, তখন তাকে ছাড় দেন না।  — সহিহ বুখারি
  • আবু দাউদ (রা.) থেকে বর্ণিত:
    রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: “যে ব্যক্তি জুলুমের দ্বারা কারো জমি দখল করবে, কেয়ামতের দিন তাকে সেই জমির সাত গুণ ওজনের মাটি বহন করতে হবে।  — সহিহ বুখারি

এই হাদিসগুলোতে জুলুমের নেতিবাচক প্রভাব এবং আল্লাহর বিচারের কথা তুলে ধরা হয়েছে। জুলুম থেকে বিরত থাকা এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।

শেষ কথা

জুলুম নিয়ে হাদিসগুলোর থেকে উপসংহার টানা যায় যে ইসলাম অত্যাচার বা জুলুমকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করেছে। জুলুমকারীরা কিয়ামতের দিনে কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হবে, এবং আল্লাহর কাছে মজলুমের দোয়া অত্যন্ত প্রভাবশালী ও সরাসরি পৌঁছানোর যোগ্য।

হাদিসগুলোতে বারবার ন্যায়বিচার, সততা, ও মানবিকতা বজায় রাখার উপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। জুলুম থেকে বিরত থাকা এবং অপরের প্রতি অন্যায় না করার শিক্ষা দেয়া হয়েছে। যেকোনো জুলুম বা অন্যায়ের শিকার ব্যক্তির পাশে দাঁড়ানো, তাকে সাহায্য করা, এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা প্রতিটি মুসলিমের কর্তব্য।

ইসলাম শান্তি, ন্যায়, ও ইনসাফের ধর্ম, এবং এসব মূল্যবোধকে রক্ষা করাই প্রতিটি মুসলিমের দায়িত্ব। জুলুম শুধু একজন ব্যক্তির বা সমাজের ক্ষতি করে না, বরং এটি সামগ্রিকভাবে মানবতার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। এজন্য, জুলুম ও অত্যাচার থেকে নিজেদের বিরত রাখতে এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে ইসলামি শিক্ষার অনুসরণ করা অত্যন্ত জরুরি।

By tech-dustbin

এই ওয়েবসাইট মূলত আমার ইন্টারনেট জ্ঞান পরিচর্চা এবং তা সবার মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য তৈরি করা হয়েছে । আমি চেষ্টা করি প্রতিদিন টেকনোলজি নিয়ে নতুন কিছু শিখতে এবং তা এই ওয়েবসাইট এর মাধ্যমে সবার সাথে শেয়ার করতে । নতুন নতুন তথ্য জানতে যারা পছন্দ করেন তারা টেক ডাস্টবিন সাইট ফলো করতে পারেন।